রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৫ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

নামের আগে-পরে ব্যবহৃত কিছু শব্দের পরিচয়

মুফতি মাহফূযুল হক:
শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামের পর লেখা হয় সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অন্য নবী-রাসুলদের নামের শেষে লেখা হয় আলাইহিস সালাম। তদ্রুপ বরেণ্য ধর্মীয় নেতা কিংবা ব্যক্তিত্বের নামের আগে-পরে নানা ধরনের উপাধি লেখা হয়।

ব্যবহৃত উপাধিগুলোর কিছু অর্থ বোঝা যায়, আর কিছু উপাধি বা নামের আগে-পরে থাকা শব্দের অর্থ অনেকই বোঝেন না; জানেন না। ক্ষেত্রবিশেষ এসব আবার সংক্ষেপেও লেখা হয়। না জানা থেকে এগুলো পড়তে অনেকের ভুল হয়। কেননা, লেখার সময় সংক্ষেপণ রীতিসিদ্ধ হলেও পড়ার সময় কিন্তু সংক্ষেপণ রীতিসিদ্ধ নয়। বরং পড়ার সময় সংক্ষিপ্ত শব্দের বিস্তারিত রূপ পাঠ করাই হলো নিয়মের কথা। নামের আগে-পরে ব্যবহৃত ওইসব শব্দের মাঝে রয়েছে

সা., স. ও দ.

এ শব্দগুলো সংক্ষেপের যেকোনো একটি লেখা হয় শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামের পর। শব্দগুলো সংক্ষেপে রাসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ ও সালাম প্রেরণের উদ্দেশ্যে লেখা হয়। রাসুল (সা.)-এর নাম উচ্চারিত হলে দরুদ পড়তে হয়। সেই চিন্তা থেকে লেখার ক্ষেত্রে এই শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়। সা., স. অথবা দ. যেটাই লেখা থাকুক; পড়তে হবে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এর অর্থ আল্লাহ তার (নবী মুহাম্মদ) ওপর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুক।

পরিভাষায় এ বাক্যের নাম দরুদ। তাই সংক্ষেপ করতে গিয়ে অনেক সময় ‘দ.’ লেখা হয়। আবার প্রথম বর্ণ ‘স’ হওয়ায় শব্দ সংক্ষেপ করে ‘সা.,’ কিংবা ‘স.’ লেখা হয়। তবে বেশ আগে ‘দ.’ লেখার প্রচলন থাকলেও বর্তমানে তা নেই বললেই চলে। এখন সবাই ‘সা.,’ অথবা ‘স.’ লেখে থাকেন।

তবে অভিজ্ঞ ইসলামি স্কলাররা এ বাক্যকে সংক্ষেপ করে লেখাকে পছন্দ করেন না। তারা সব সময় পূর্ণ বাক্য লেখার পক্ষপাতী।

আ.

এ শব্দসংক্ষেপ লেখা হয়ে থাকে শেষ নবী ছাড়া অন্য সব নবীর নামের পর। এর পূর্ণ রূপ হলো ‘আলাইহিস সালাম।’ অর্থ, তার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।

রা., রাযি., রাজি. ও রাদি.

এ শব্দগুলোর যেকোনোটি লেখা হয় সাহাবিদের নামের পর। পরিভাষায় সাহাবি বলা হয়, যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের পর শেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হয়েছেন এবং মুসলিম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তারা রাসুল (সা.)-এর স্নেহধন্য, তাদের নাম সম্মানের সঙ্গে লিখতে হয়।

এ শব্দ সংক্ষেপগুলোর পূর্ণরূপ একবচন পুরুষের ক্ষেত্রে ‘রাজিয়াল্লাহু আনহু’, বহুবচন পুরুষের ক্ষেত্রে ‘রাজিয়াল্লাহু আনহুম’, এক বচন মহিলার ক্ষেত্রে ‘রাজিয়াল্লাহু আনহা’, বহুবচন নারীর ক্ষেত্রে ‘রাজিয়াল্লাহু আনহুন্না’ এবং দ্বি-বচন পুরুষ-মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে ‘রাজিয়াল্লাহু আনহুমা।’ পূর্ণ বাক্যের অর্থ হলো আল্লাহ তার অথবা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। পূর্ণ বাক্যের অর্থ, আল্লাহ তার অথবা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হোন।

র., রহ.

র., রহ. শব্দ দুটো সংক্ষেপ লেখা হয় নবী ও সাহাবি ছাড়া বিশিষ্ট নেককার, পরহেজগার, মুত্তাকি মুসলিমদের মধ্যে যারা মারা গেছেন তাদের নামের পর। পূর্ণ রূপ ‘রাহমতুল্লাহি আলাইহি।’ বাক্যটির অর্থ তার ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।

দা. বা., মু. আ., হাফি.

এ শব্দসংক্ষেপগুলো লেখা হয় বিশিষ্ট নেককার, পরহেজগার মুত্তাকি মুসলিমদের মধ্যে যারা জীবিত আছেন তাদের নামের পর। দা. বা.-এর পূর্ণ উচ্চারণ হলো ‘দামাত বারাকাতুহুম।’ অর্থ তার কল্যাণগুলো স্থায়ী হোক। বস্তুত শব্দটি একটি দোয়া। বিশেষত আরব দেশে দোয়াটি সাধারণত জীবিত লোকদের নামের পর উল্লেখ করা হয়। যেকোনো মুসলিমের ক্ষেত্রে এই দোয়া বলা যায়।

মু. আ.-এর পূর্ণ উচ্চারণ হলো ‘মুদ্দাজিল্লুহুল আলি।’ অর্থ তার মহান ছায়া আমার ওপর দীর্ঘ হোক। হাফি.-এর পূর্ণ উচ্চারণ হলো ‘হাফিজাহুল্লাহ।’ অর্থ আল্লাহ তার হেফাজত করুক।

মাও.

শব্দটি সংক্ষেপ লেখা হয় কওমি মাদ্রাসা থেকে তাকমিল বা দাওরায়ে হাদিস উত্তীর্ণ হয়েছেন অথবা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করেছেন তাদের নামের আগে। এর পূর্ণ উচ্চারণ হলো ‘মাওলানা।’ অর্থ আমাদের কল্যাণকামী বন্ধু।

আল্লামা

আল্লামা শব্দের অর্থ মহাজ্ঞানী। এটি ইসলামি চিন্তা, আইন ও দর্শনের ক্ষেত্রে উঁচুপর্যায়ের পণ্ডিতদের নামের সঙ্গে ব্যবহৃত সম্মানজনক উপাধি।

মুহাদ্দিস, মুফাসসির, মুফাসসিরে কোরআন

মুহাদ্দিস মানে হাদিস শাস্ত্রের পণ্ডিত। হাদিস শাস্ত্রে বিশেষ পাণ্ডিত্য অর্জনকারীর জন্য এই উপাধি ব্যবহার করা হয়। মুফাসসির মানে তাফসিরকারক। কোরআনের ব্যাখ্যা করতে সক্ষম এবং এ বিষয়ে বিশেষ জ্ঞানের অধিকারীকে মুফাসসির বলা হয়। এখান থেকে এসেছে মুফাসসিরে কোরআন উপাধি।

ইমাম, পেশ ইমাম, খতিব

যিনি মসজিদে নামাজের ইমামতি করেন তাকে ‘ইমাম’ বলা হয়। আর মসজিদে একাধিক ইমাম থাকলে প্রধান ইমামকে ‘পেশ ইমাম’ বলা হয়। আর যিনি জুমার নামাজের খুতবা দেন এবং ওই নামাজ পড়ান তাকে ‘খতিব’ বলা হয়।

এভাবে নামের আগে-পরে ছাড়াও মুসলিম সভ্যতায় ব্যবহারিক জীবনে বেশ কিছু আরবি বাক্য খুব গুরুত্ব ও যতেœর সঙ্গে ব্যবহৃত হয়। যেমন

আলহামদুলিল্লাহ : কোনো শুভ সংবাদের আগে বা পরে এ বাক্যটি বলা হয়। যেমন : আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি। বাক্যটির অর্থ সব প্রশংসা আল্লাহর।

ইন্না লিল্লাহ : ছোট-বড় যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির শিকার হলে এ বাক্যটি বলা হয়। কোনো কিছু হারিয়ে গেলে বলতে হয় ইন্না লিল্লাহ। আবার অনেক সময়, বিশেষত কারও মৃত্যুর সংবাদ দেওয়ার সময় আরেকটু বড় করে বলা হয় ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বাক্যটির অর্থ আমরা সবাই আল্লাহর অধীন এবং আমরা সবাই তারই কাছে ফিরে যাব।

জাজাকাল্লাহ : ধন্যবাদ জানানোর জন্য এ বাক্যটি বলা হয়। এর অর্থ আল্লাহ আপনাকে প্রতিদান দেবেন।

ইনশা আল্লাহ : ভবিষ্যতে কোনো কিছু করার ইচ্ছা ব্যক্ত করার আগে বা পরে এ বাক্যটি বলা হয়। যেমন ইনশা আল্লাহ, আমি কাল আপনার সঙ্গে দেখা করব। অর্থ যদি আল্লাহর ইচ্ছা হয়।

মাশা আল্লাহ : ভালো কোনো কিছু দেখলে এ বাক্য বলা হয়। যেমন মাশা আল্লাহ, আপনার ছেলে খুব সুন্দর হয়েছে। মাশা আল্লাহ শব্দের অর্থ আল্লাহ যেমন চেয়েছেন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION